BURDWAN UNIVERSITYHISTORY MINOR1ST SEMESTER, CC1LAST MINUTE SUGGESTION

BURDWAN UNIVERSITY
HISTORY MINOR
1ST SEMESTER, CC1
LAST MINUTE SUGGESTION 


প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান 


১. প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান/ সাহিত্যমূল্য (দেশি/বিদেশি/ পর্যটক) এদের গুরুত্ব কতখানি?

২.প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের মুদ্রার গুরুত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকা 

নির্দিষ্ট ওজনবিশিষ্ট ধাতব খণ্ড যখন বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ও স্বীকৃত হয় তখন তাকে মুদ্রা বলা হয়। প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় যেখানে লিপি নীরব সেখানে মুদ্রা কথা বলে। পুরাতাত্বিক তথ্য সূত্রের মধ্যে অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে লেখমালার পরেই গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল মুদ্রা। পি. এল. গুপ্ত বোধহয় তা মানতে রাজী নন। কারণ তার মতে-মানব সভ্যতা শুরুর সময় থেকেই পণ্য-বিনিময় এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা হিসাবে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

মুদ্রার শ্রেণি বিভাগ

প্রাচীন যুগের মুদ্রাকে প্রধানত দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়- (ক) গুপ্তপূর্ব যুগের অঙ্কিত মুদ্রা এবং (খ) গুপ্ত সম্রাটদের প্রচলিত মুদ্রা। বিদেশীয় মুদ্রাকে প্রধানত (ক) গ্রিক রাজাদের মুদ্রা, (খ) শকরাজাদের মুদ্রা, (গ) কুষাণ বংশীয় রাজাদের মুদ্রা, (ঘ) জনপদসমূহের মুদ্রা-এই ভাগে ভাগ করা যায়। আবার ভারতীয় মুদ্রাকে (ক) রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে প্রচলিত মুদ্রা, (খ) বেসরকারি কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রচলিত মুদ্রা এভাবেও ভাগ করা যায়।


মুদ্রার গুরুত্ব

 প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রা নানা রকমভাবে সাহায্য করেছে, কারণ- 

১। সাহিত্যিক উপাদানের সত্যতা যাচাই

সাহিত্য ও লিপি থেকে সংগৃহীত ঐতিহাসিক তথ্যাদি
বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত মুদ্রার দ্বারা যাচাই করা সম্ভব হয়। এভাবে ঐতিহাসিক ঘটনার সত্য ও নিরপেক্ষ বর্ণনা
দান করা সম্ভব হয়।

 ২। অর্থনৈতিক উন্নতি ও ধাতুশিল্পের কথা

এই সকল মুদ্রা থেকে সমসাময়িক ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রানীতি, ধাতুশিল্পের উন্নতি, শিল্প নিপুণতা প্রভৃতি সম্বন্ধে জানা যায়।

৩। রাজা ও রাজনৈতিক ইতিহাস

 মুদ্রার তারিখ দেখে সমসাময়িক রাজা ও তাঁর সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস জানা যায়। এছাড়া মুদ্রার প্রাপ্তিস্থান থেকে রাজ্যের বিস্তৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার প্রভৃতি সম্বন্ধেও জানা যায়।

৪। ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি

 অনেক ক্ষেত্রে মুদ্রা থেকে রাজাদের ধর্মবিশ্বাস এবং কৃষ্টিগত উন্নতির স্তরও পরিমাপ করা যায়। ব্যাকট্রিয় গ্রিক্, শক, পহ্লব ও কুষাণদের সম্বন্ধে মুদ্রা থেকে যে সকল তথ্য সংগৃহীত হয়েছে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট। 

পঞ্চমত (অন্যান্য গুরুত্ব)

ক। মুদ্রায় অঙ্কিত বাদ্যযন্ত্র, অলঙ্কার, পোশাক প্রভৃতি থেকে সে যুগের সামাজিক জীবনের পরিচয় মেলে।

খ। স্বর্ণমুদ্রা থেকে যেমন আর্থিক সমৃদ্ধির পরিচয় মেলে, তেমনি খাদযুক্ত মুদ্রা থেকে আর্থিক অবনতির সন্ধান পাওয়া যায়।

গ। একটি মুদ্রার ওপর অন্য রাজার ছাপ থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রথম রাজা দ্বিতীয় রাজার দ্বারা পরাজিত হয়েছিল।

ঘ। মুদ্রার ভাষা থেকে ভাষার বিবর্তনও জানা যায়।

সীমাবদ্ধতা:

(ক) মুদ্রা থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

(খ) কেননা অধিকাংশ মুদ্রা রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত হয়েছিল।

(গ) এতে বহু ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত বর্ণনা রয়েছে।


উপসংহার 

নানা সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও মুদ্রা সংক্রান্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের যে-কোনো দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে মুদ্রার সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করা একান্ত জরুরি, মুদ্রা হল এক ধরনের ঐতিহাসিক দলিল।


মন্তব্য

সামগ্রিক আলোচনা থেকে বলা যায় যে সতর্কতার সঙ্গে একে ব্যবহার করলে এর গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়।



প্রত্যেকের মান - ২


ভারতবর্ষকে কে, কেন 'নৃ-তত্ত্বের যাদুঘর' বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তর। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতবর্ষকে 'নৃ-তত্ত্বের যাদুঘর' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, নৃতাত্ত্বিক বিচারে ভারতের আদিম জনগোষ্ঠীতে মূলত ছয়টি জনগোষ্ঠী (নেগ্রিটো, প্রোটো অস্ট্রোলয়েড, মোঙ্গালয়েড, নর্ডিক, মেডিটেরিয়ান, ব্রাকিসিফেলেস) ছিল। এরূপ বৈচিত্র্যের কারণেই ভারত 'নৃ-তত্ত্বের যাদুঘর' এ পরিণত হয়েছে।


প্রাচীন ভারত ইতিহাসের কয়েকটি সাহিত্যিক উপাদানের নাম লেখো।
অথবা, প্রাচীন ভারতের যে কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক উপাদানের নাম করো।

 উত্তর। প্রাচীন ভারত ইতিহাসের কয়েকটি সাহিত্যিক উপাদান হলো-১। কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র', ২। মেগাস্থিনিসের 'ইন্ডিকা', ৩। বিশাখাদত্তের 'মুদ্রারাক্ষস', ৪। বাণভট্টের 'হর্ষচরিত', ৫। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত', ৬। কলহনের 'রাজতরঙ্গিনী'।

প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য দুটির নাম লেখো। এর রচয়িতা কারা?

উত্তর। প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য দুটি হলো 'রামায়ণ ও মহাভারত'। 
•রামায়ণ রচনা করেন বাল্মীকি।
• মহাভারত রচনা করেন মহর্ষি ব্যাসদেব।

পুরাণ কী?

 ভারতের লিখিত ঐতিহাসিক উপাদানগুলির একটি বিশেষ দিক হলো পুরাণ। এটি হলো খ্রিস্টিয় চতুর্থ-পঞ্চম শতক থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে মূলত ব্রাহ্মণদের দ্বারা প্রাকৃত ভাষায় লিখিত বংশানুক্রমিক তথ্য। এগুলিতে প্রাক্-বৈদিক পরম্পরা, সমসাময়িক সমাজের ও ধর্মের বিভিন্ন দিককে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। পুরাণ পঞ্চম বেদ নামেও পরিচিত।


"বিক্রমাক্ষদেব চরিত" কী?

কল্যাণের চালুক্যবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা যষ্ঠ বিক্রমাদিত্য (১০৭৬-১১২৮ খ্রিস্টাব্দ)-এর সভাকবি বিলন ছিলেন "বিক্রমাঙ্কদেব চরিত" গ্রন্থের রচয়িতা। এই গ্রন্থে চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজত্ব ও তাঁর কীর্তিসমূহের উল্লেখ আছে।

 প্রাচীন ভারতে আগত কয়েকজন বিদেশি পর্যটকদের নাম লেখো।

উত্তর। প্রাচীন ভারতে আগত কয়েকজন বিদেশি পর্যটকের নাম হলো-গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস, চৈনিক
পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাঙ, আরব পণ্ডিত আল-বেরুণী।

 হিউয়েন সাঙ কী জন্য বিখ্যাত? তাঁর গ্রন্থের নাম কী?

উত্তর। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন। তিনি মহাযান বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত এবং বৌদ্ধশাস্ত্র পড়ার জন্য ভারতে আসেন। তিনি তাঁর ভারত ভ্রমণ সংক্রান্ত বিবরণ যে গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন তা 'শি-ইউ-কি' নামে পরিচিত।

ফা-হিয়েন কে ছিলেন? তাঁর রচিত গ্রন্থটির নাম কী?

উত্তর। ফা-হিয়েন ছিলেন একজন চৈনিক পরিব্রাজক। তিনি গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে ভারতে আসেন।

ফা-হিয়েন রচিত গ্রন্থটির নাম হলো 'ফো-কুয়ো-কি'।

'পেরিপ্লাস অফ দ্য এরিথ্রিয়ান সী' গ্রন্থের গুরুত্ব কী?

খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে একজন অজ্ঞাতপরিচয় গ্রিক নাবিকের রচিত 'পেরিপ্লাস অফ দ্য এরিথ্রিয়ান সী' প্রাচীনভারত ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি থেকে তৎকালীন ভারতের বাণিজ্য, বাণিজ্যপথ, অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়।


'রামচরিত' গ্রন্থের লেখক কে? এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

উত্তর 'রামচরিত' গ্রন্থের লেখক হলেন সন্ধ্যাকর নন্দী।

 • রামচরিত গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হলো-

 (১) এটি হলো পালরাজাদের ইতিহাসের অন্যতম আকর গ্রন্থ। এটি থেকে পালরাজা রামপালের শাসনকালের ইতিহাস জানা যায় এবং
 (২) পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালের শাসনকালে সংঘটিত কৈবর্ত বিদ্রোহের কথা জানা যায়।


প্রত্নতত্ত্ব কাকে বলে?

উত্তর। "আর্কিওলজি" (Archaeology) শব্দ থেকে "প্রত্নতত্ত্ব" কথাটির উদ্ভব যার আক্ষরিক অর্থ হলো অতীতের বস্তু সম্পর্কে চর্চা। পাথর ও বিভিন্ন ধাতুর ওপর খোদিত লিপি, মুদ্রা এবং বিভিন্ন তড-সৌধ ইতিহাসের আকর উপাদানরূপে বিবেচিত হয়েছে। এগুলির চর্চা ও অনুশীলনকে প্রত্নতত্ত্ব বলা হয়।

'ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ' কে প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার কাজ কী?

 উত্তর। ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া' প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৬১ খ্রিঃ)। এরই সূত্র ধরে পরবর্তীকালে লর্ড কার্জন প্রতিষ্ঠা করেন 'কেন্দ্রীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ' (১৯০৩ খ্রিঃ)।

 ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাজ ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধান করা।

এলাহাবাদ প্রশস্তি' কে রচনা করেন? এটি থেকে কোন রাজার ইতিহাস জানা যায়?
অথবা, 'এলাহাবাদ প্রশস্তি'র গুরুত্ব কী?

উত্তর। 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' রচনা করেন সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেন।

• 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' থেকে গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের ইতিহাস জানা যায়।

 'আইহোল শিলালেখ' কী?

উত্তর। দাক্ষিণাত্যের বাতাপি বা বাদামির চালুক্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি দ্বিতীয় পুলকেশীর (৬০৯-৬৪২ খ্রিঃ) সভাপতি রবিকীর্তি 'আইহোল শিলালেখ'র রচয়িতা। এই লেখতে দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজ্য বিস্তার ও বিভিন্ন যুদ্ধে জয়লাভের বর্ণনা বিবৃত হয়েছে।

'নাসিক প্রশস্তি' থেকে কোন রাজার রাজ্য জয় ও সমাজ সংস্কার বিষয়ক তথ্য জানা যায়? এটি
কে রচনা করেন?

অথবা, 'নাসিক প্রশস্তি' কে রচনা করেন? কার কৃতিত্বের কথা এতে লেখা হয়েছে?

উত্তর। 'নাসিক প্রশস্তি' থেকে সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর রাজ্য জয় ও সমাজ সংস্কার বিষয়ক তথ্য জানা যায়।

• নাসিক প্রশস্তি রচনা করেন সাতকর্ণীর মাতা গৌতমী বলশ্রী।


জুনাগড় লেখ কী জন্য বিখ্যাত?
অথবা, জুনাগড় লিপিতে কার কীতি কাহিনি বর্ণিত হয়েছে?


উত্তর। উজ্জয়িনীর কর্দমক বংশীয় শক-ক্ষত্রপদের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাতনামা ছিলেন রুদ্রদামন (১৩০-১৬০খ্রিঃ)। তিনি প্রসিদ্ধ জুনাগড় লেখর প্রণেতা। ওই লেখ থেকে তাঁর রাজ্যবিস্তারের পরিচয় পাওয়া যায়।


 কে, 'রাজতরঙ্গিনী' রচনা করেন? এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

 উত্তর। কাশ্মীরের কবি কলহন 'রাজতরঙ্গিনী' রচনা করেন।

• 'রাজতরঙ্গিনী' গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হলো যে, এই গ্রন্থে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়ের কাশ্মীরের ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।


প্রাচীন ভারতের চারটি চরিত সাহিত্যের নাম করো।


উত্তর। প্রাচীন ভারতের চারটি চরিত সাহিত্যের নাম হলো-বিলহনের লেখা 'বিক্রমাঙ্কদেব চরিত', সন্ধ্যাকর নন্দীর লেখা 'রামচরিত', অশ্বঘোষের লেখা 'বুদ্ধচরিত' এবং বাণভট্টের রচিত 'হর্ষচরিত'।

 প্রাচীন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি কী কী?

উত্তর। প্রাচীন ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি হলো শিলালিপি (যেমন, হাতিগুম্ফা শিলালিপি, অশোকের শিলালিপি, এলাহাবাদ প্রশস্তি), মুদ্রা (কুষাণ যুগের মুদ্রা, গুপ্তযুগের মুদ্রা), স্থাপত্য-ভাস্কর্য (গুহামন্দির, পল্লব-মন্দির, সারনাথ ও সাঁচী স্তূপ), অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ (যেমন হরপ্পা, মহেঞ্জোদড়ো, বাংলার চন্দ্রকেতুগড় ও বেড়াচাপা)।

'ইন্ডিকা' ও 'অর্থশাস্ত্র'-র রচয়িতা কে?

উত্তর
 'ইন্ডিকা'র রচয়িতা হলেন গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস।

• 'অর্থশাস্ত্র'-র রচয়িতা হলেন কৌটিল্য বা চাণক্য।


হরপ্পা সভ্যতা

৩. হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে কি জানো? অথবা নগর জীবন অথবা সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য লেখ.


৪. সিন্ধু সভ্যতার পতন আলোচনা কর বা আর্য আক্রমণ তত্ত্বটি আলোচনা কর.


৫.সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে সমকালীন অন্যান্য সভ্যতার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো।

৬.মেহেরগড় সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনা কর।



প্রত্যেকের মান - ২

ভারতে কখন এবং কোথায় প্রথম নাগরিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল?
অথবা, ভারতবর্ষে প্রথম নাগরিক সভ্যতা কোনটি?

উত্তর। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের মধ্যে বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত সিন্ধুনদের অববাহিকায় হরপ্পা, মহেঞ্জোদড়ো ও তার সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রথম নাগরিক সভ্যতা গড়ে ওঠে।

উনিশ শতকে কারা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়োর আবিষ্কার করেন?

ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ চার্লস ম্যাসন সর্বপ্রথম ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু উপত্যকায় হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম হরপ্পা থেকে ১৮৫৩ ও ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করেন।

বিংশ শতকে কারা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতার আবিষ্কার করেন?
অথবা, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়োর আবিষ্কর্তা কারা ছিলেন?


উত্তর। উনিশ শতকে বিক্ষিপ্তভাবে হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হলেও বিংশ শতকে সামগ্রিকভাবে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়ো আবিষ্কৃত হয়। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান স্যার জন মার্শালের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ দয়ারাম সাহানি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার ইরাবতী নদী অববাহিকায় হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কার করেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলায় মহেঞ্জোদড়ো নামক স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতার আবিষ্কার করেন।

ভারতের প্রাচীনতম সিন্ধু সভ্যতা কোথায় বিকশিত হয়েছিল এবং এর দুটি প্রধান কেন্দ্রের নাম কী?

উত্তর। বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত সিন্ধু নদের উপত্যকায় ভারতের প্রাচীনতম সিন্ধু সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। এই সভ্যতার প্রধান দুটি কেন্দ্রের নাম হলো-
১। পাঞ্জাবের মন্টগোমারি জেলার হরপ্পা এবং
২। সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদড়ো।

 হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রস্থলগুলির নাম লেখো।

উত্তর। হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রস্থলগুলি হলো-পাঞ্জাবের হরপ্পা, মহেঞ্জোদড়ো, কালিবঙ্গান ও রুপার, গুজরাটের লোথাল ও রংপুর, সিন্ধুপ্রদেশের কোটদিজি ও চানহুদড়ো, উত্তরপ্রদেশের আলমগিরপুর, বালুচিস্তানের দাবরকোট, হরিয়ানার বানওয়ালি প্রভৃতি।


সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা কেন 'হরপ্পা সভ্যতা' নামেও পরিচিত?

 আবিষ্কারকালে সিন্ধুসভ্যতা মূলত সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হরপ্পা অঞ্চলে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে অনেক বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। হরপ্পায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির গুরুত্বও অনেক বেশি। তাই সিন্ধুসভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা নামেও পরিচিত।


হরপ্পা-সংস্কৃতির কালসীমা কীভাবে নির্ণয় করা হয়েছে?

উত্তর। কোনো লিখিত তথ্যের অভাবের জন্য প্রত্নতত্ত্ববিদ্রা ওই যুগে ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীর ওপর ভিত্তি করে সময়কাল নির্ধারণ করেন। বর্তমানে "কার্বন-১৪" পদ্ধতির সাহায্যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সময়কাল নির্ধারণের প্রয়াস দেখা যায়। আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্টাব্দ পূর্ব থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পূর্ব পর্যন্ত হরপ্পা সভ্যতার কালসীমার ব্যাপ্তি ধরা হয়।



হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য কেমন ছিল? 
অথবা, হরপ্পা সভ্যতার কী ভারতবর্ষের বাইরে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল?


উত্তর। হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতির-একটি বিশেষ দিক ছিল বাণিজ্য। এই সভ্যতায় অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য পরিচালিত হতো। সংলগ্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যের পাশাপাশি বালুচিস্তান, আফগানিস্তান,মিশর, সুমের, ব্যাবিলনের সঙ্গেও হরপ্পা সভ্যতার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হতো।


সিন্ধু সভ্যতার পতনের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

অথবা, হরপ্পা সভ্যতার পতনের দুটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করো। 

উত্তর। সিন্ধু সভ্যতার পতনের দুটি কারণ হলো-প্রথমত, প্রাকৃতিক বিপর্যয় (সিশুনদের বন্যা, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি বা খরা) ও প্রশাসনিক অবক্ষয় ছিল সিন্ধু সভ্যতার পতনের প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, বহিরাগত আর্যদের আক্রমণের ফলেও এই সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

 হরপ্পাবাসীদের ধর্ম কেমন ছিল?

উত্তর। হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে মন্দিরের মতো কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। বিভিন্ন স্থানে স্ত্রী-মূর্তির আধিক্য দেখে মনে হয় যে, তাদের মধ্যে মাতৃপূজার প্রচলন ছিল। একটি শিব-মূর্তির মতো তিনটি শিং-যুক্ত মূর্তিও আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত এই সময় শিবলিঙ্গের পূজারও প্রচলন ছিল। তাছাড়া দেব-দেবী জ্ঞানে গাছ, পাথর, পশুপক্ষীরও পূজা হতো। বিভিন্ন উপায়ে মৃতদেহ সৎকার করবার ব্যবস্থা ছিল।

 হরপ্পা সভ্যতার অবদান কী?

উত্তর। হরপ্পা সভ্যতার প্রধান অবদানগুলি হলো এটি ছিল প্রথম পরিকল্পিত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা, প্রথম পৌর সংস্থার অধিকারী। এই সভ্যতা হলো ভারতের মৌলিক সভ্যতা। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সভ্যতার স্রষ্টারা ছিল ভারতীয়। এই সভ্যতাই ভারতবর্ষের সঙ্গে বিদেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল। এই ধারা আজও প্রবহমান।

 সিন্ধুলিপি সম্পর্কে কী জানো?

উত্তর। হরপ্পার প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে সাংকেতিক লিপিযুক্ত বেশ কিছু সিলমোহর পাওয়া গেছে। এগুলিতে প্রায় ৩৭৫-৪০০টির মতো চিহ্ন রয়েছে। তবে এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি। অনুমান করা হয় যে, হরপ্পাবাসীরা লিখন পদ্ধতি জানতো। এগুলি লেখা হতো ডান দিক থেকে বাঁ দিকে।অনুমান করা হয় দ্রাবিড় ভাষাগুলির সঙ্গে হরপ্পা লিপির মিল ছিল।


 হরপ্পা সভ্যতাকে কেন তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা বলা হয়?

উত্তর। হরপ্পা সভ্যতা ছিল নব্যপ্রস্তর যুগের শেষ পর্যায়ের সভ্যতা। হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা পাথরের পাশাপাশি তামা ও ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহারও জানতো। হরপ্পার বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে প্রস্তর, তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি ছুরি, কুঠার, বাটালি এবং ভাস্কর্যের নমুনা পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে ব্রোঞ্জের তৈরি নারী মূর্তি ও পশুমূর্তির কথা বলা যায়। এ সমস্ত কারণেই এই সভ্যতা তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা নামে পরিচিত।

 সিন্ধু সভ্যতার মানুষরা কোন্ কোন্ ধাতুর ব্যবহার জানতেন? 

সিন্ধুসভ্যতার মানুষরা তামা ও ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার জানতেন।

 হরপ্পা বহির্ভূত অঞ্চলে যে কোনো দুটি হরপ্পীয় প্রত্নক্ষেত্র চিহ্নিত করো।

হরপ্পা বহির্ভূত অঞ্চলে দুটি হরপ্পীয় প্রত্নক্ষেত্র হলো-
(১) উত্তরপ্রদেশের আলমগিরপুর এবং
(২) গুজরাটের লোথাল।


প্রাক্ হরপ্পীয় সংস্কৃতি' কী?

 হরপ্পা ও মহেন-জো-দারোর নাগরিক সভ্যতা বিকশিত হওয়ার পূর্বে তাম্র-প্রস্তর যুগের বিকাশ ঘটে। এই যুগের মানুষ তামা, ব্রোঞ্জ ও হাড়ের তৈরি নানা কাজের উপযোগী হাতিয়ার ব্যবহার করত, যাযাবর জীবন ছেড়ে কাঁচা ইটের বাড়িতে বাস করত, মানুষ খাদ্য উৎপাদন ও পশুপালন করত। হরপ্পা সভ্যতার পূর্ববর্তী এই সংস্কৃতি 'প্রাক্-হরপ্পীয় সংস্কৃতি' নামে পরিচিত। বালুচিস্থানের ঝোব, কোয়েটা, সিন্ধুর কোটদিজি, পাঞ্জাবের কালিবঙ্গান প্রভৃতি স্থানে এই সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া গেছে।


মেহেরগড় সভ্যতা কোথায় অবস্থিত? কবে কারা এই সভ্যতা আবিষ্কার করেন?

• পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা শহর থেকে ১৫০ কিমি দক্ষিণে বোলান নদীর উপত্যকায় মেহেরগড় সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

• ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ ও রিচার্ড মিডো মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন।

 মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কয়েকটি কেন্দ্রের নাম লেখো।

• মেহেরগড়, রানা গুন্ডাই, কিলিগুল মহম্মদ, মুন্ডিপাক, পেরিয়ানো গুন্ডাই, নৌসেরা প্রভৃতি হল মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কয়েকটি কেন্দ্র।


বৈদিক যুগ


৬. বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে চিত্র পাওয়া যায় তা লেখ.

৭.বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

৮.বৈদিক যুগের বর্ণ ব্যবস্থা ও জাতিভেদ প্রথা কী?

৯.বৈদিক যুগে সভা ও সমিতি সম্পর্কে আলোচনা কর।

১০.বৈদিক যুগে ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা কর।

১১.বৈদিক যুগে নারীদের স্থান আলোচনা কর।

প্রত্যেকের মান - ২


আর্য কারা? অথবা, আর্য বলতে কী বোঝায়?

উত্তর। ভারতে বৈদিক সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতাদের সাধারণত আর্য নামে অভিহিত করা হয়। তাই আর্য বলতে আর্য জাতি বোঝায়। অপর একদল গবেষকদের মতে, আর্য কোনো জাতিবাচক শব্দ নয়, এটি হলো একটি ভাষাগত ধারণা। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার (লাতিন, জার্মান, গ্রিক, গথিক, কেলটিক, পারসিক ও সংস্কৃত) যে কোনো একটি ভাষায় 'যারা কথা বলতো তারাই আর্য' নামে পরিচিতি লাভ করে।

আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?

• উত্তর। আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। গঙ্গানাথ ঝাঁ প্রমুখের মতে, ভারতবর্ষই হলো আর্যদের আদি বাসস্থান। আবার কারো মতে, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বর্তমান অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লাভাকিয়ার তৃণভূমিই ছিল আর্যদের আদি বাসস্থান। তবে বর্তমানে অধিকাংশ ঐতিহাসিক জার্মান পন্ডিত ব্রানেডেনস্টাইনের মতকে মেনে নিয়ে বলেছেন যে, রাশিয়ার অন্তর্গত ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত 'কিরঘিজ স্তেপি' ছিল আর্যদের আদি বাসস্থান।


আর্য সমস্যা কী?

উত্তর। আর্থ সমস্যার দুটি দিক-যথা আর্য কারা এবং আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায়? অনেকের মতে, 'আর্য' বলতে 'আর্য জাতি গোষ্ঠী' কে বোঝায়। আবার অন্য একদল গবেষকের মতে, আর্য কোনো জাতিবাচক শব্দ নয়, তা হলো একটি ভাষাগোষ্ঠী। আর্থ সমস্যার দ্বিতীয় দিক হলো-অনেকের মতে, আর্যদের আদি বাসস্থান হলো ভারত। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিক জার্মান পণ্ডিত ব্রানডেস্টাইনের মতকে মেনে নিয়ে বলেছেন যে, আর্যরা ভারতে বহিরাগত। কারণ রাশিয়ার অন্তর্গত ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত 'কিরঘিজ স্তেপি' ছিল আর্যদের আদি বাসস্থান।

আর্যরা ভারতের কোথায় প্রথম আগমন করে?

উত্তর। আনুমানিক ১৫০০ খিঃ পূর্বাব্দে আর্যরা উত্তর ভারতের সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করে। উত্তর ভারতের সাতটি নদী অববাহিকা (শতষু, বিপাশা, চন্দ্রভাগা, বিতস্তা, ইরাবতী, সিন্ধু ও সরস্বতী) ছিল সপ্তসিন্ধু অঞ্চলের অন্তর্গত। অর্থাৎ আফগানিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশের কিছু অংশ জুড়ে ছিল ভারতে আর্যদের প্রথম বাসস্থান।

 'সপ্তসিধু' কাকে বলে?

 উত্তর। আর্যরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে সিন্ধু নদীর উপত্যকা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বৈদিক সাহিত্যে এই অঞ্চল 'সপ্তসিন্ধু' বা 'সপ্তসিন্ধব' অর্থাৎ সাতটি নদীর অঞ্চল বলে উল্লিখিত আছে। এই নদীগুলি হলো বিতস্তা, চিনাব, রাভি, বিপাশা, শতদ্রু, সরস্বতী, দৃশদ্বতী।

 আর্যদের আদি বাসস্থান বিতর্কে 'মধ্য এশিয়া তত্ত্ব' কী?

উত্তর। আর্যদের আদি বাসস্থান বিতর্কের দুটি দিক, যথা ইউরোপীয় তত্ত্ব এবং মধ্য এশিয়া তত্ত্ব। গবেষক ম্যাক্স মূলার প্রমুখের মতে, আর্যদের আদি বাসস্থান হলো মধ্য এশিয়া। কারণ-প্রথমত, পারসিক গ্রন্থ 'জেন্দ আবেস্তা'র সঙ্গে ঋগ্বেদের ভাষাতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, অভিপ্রয়াণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্যরাই ভারতে এসেছিল।

আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কী? এটি কয়টি ভাগে বিভক্ত ও কী কী?

উত্তর। আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো বেদ।
বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত, যথা-ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুঃবেদ, অথর্ববেদ। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম বেদ হলো ঋগ্বেদ।

 বেদ'শ্রুতি' নামে পরিচিত কেন?

 উত্তর। বেদ লিখিত হওয়ার পূর্বে বেদের স্তোত্রগুলি প্রাচীন ঋষি ও গুরু-শিষ্যরা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখতো। এভাবে শ্রুতির মাধ্যমে বেদ স্মৃতিকরণ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চলেছিল। তাই বেদ শ্রুতি নামে পরিচিত।

বেদকে 'অপৌরুষেয়' বলা হয় কেন?

 আর্যদের ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রাথমিক পর্বে কোনো পুরুষের দ্বারা রচিত হয়নি, তা ছিল ঈশ্বরের মুখানিসৃত বাণী। তাই বেদকে অপৌরুষেয় বলা হয়।

উপনিষদ কী?

 উত্তর। প্রতিটি বেদের চার ভাগ, যথা-ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, সংহিতা ও উপনিষদ। আরণ্যকের সারাংশের ওপর ভিত্তি করে যে দার্শনিক চিন্তার উদ্ভব হয়েছিল তা উপনিষদ নামে পরিচিত। উপনিষদ বেদ-এর অন্ত বা শেষভাগে অবস্থিত তাই তা বেদান্ত নামে পরিচিত।

 উপনিষদের জন্মান্তরবাদ তত্ত্ব কী?

উত্তর। উপনিষদে বলা হয়েছে মানুষ ইহজন্মে কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগের অধিকারী হয়। কর্মফল ভোগ করার জন্য পুনর্জন্ম ঘটে। এটিই জন্মান্তরবাদ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

বৈদিক সাহিত্য সম্বন্ধে কী জানো?

 উত্তর। বেদ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ ও বেদাঙ্গা এইগুলি নিয়ে বৈদিক সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল। বেদ-এর চারটি ভাগ রয়েছে-ঋণ, সাম, যজু ও অথর্ব। আর্যদের ইতিহাস রচনার প্রধানতম উপাদান বৈদিক সাহিত্য। বৈদিক সাহিত্য দীর্ঘদিন ধরে বিন্যস্ত হয়েছিল। প্রথম দিকে বেদ লিপিবন্ধ হয় নি-তা মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। তাই বেদের অপর নাম শ্রুতি। 

'ষড়দর্শন' কী?

উত্তর। বেদের যে ছয়টি দর্শনের উল্লেখ রয়েছে সেগুলিকে একত্রে ষড়দর্শন বলা হয়। উপনিষদের গভীর তত্ত্বগুলির আলোচনা ও ব্যাখ্যা থেকেই ষড়দর্শনের উৎপত্তি হয়েছিল। যড়দর্শন হলো- কপিলের 'সাংখ্যদর্শন', পতঞ্জলীর 'যোগ দর্শন', গৌতমের 'ন্যায় শাস্ত্র', কণাদের 'বৈশেষিক দর্শন', জৈমিনীর 'পূর্ব মীমাংসা' এবং বেদব্যাসের 'উত্তর মীমাংসা'।


 আর্য সমাজে বর্ণপ্রথা বলতে কী বোঝ?

অথবা, বৈদিক যুগের সমাজ কয়টি বর্ণে বিভক্ত ছিল?

উত্তর। ঋগ্‌বৈদিক যুগে আর্যদের সমাজ গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল, যথা-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। সাধারণত অনার্যরা শূদ্র বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিল।


'অনুলোম' ও 'প্রতিলোম' বিবাহ কী?

• উত্তর। বৈদিক যুগের বিবাহপদ্ধতির মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো 'অনুলোম' বিবাহ ও 'প্রতিলোম' বিবাহ। উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে নিম্নবর্ণের নারীর বিবাহকে 'অনুলোম' বিবাহ বলে। পক্ষান্তরে উচ্চবর্ণের নারীর সঙ্গে নিম্নবর্ণের পুরুষের বিবাহকে 'প্রতিলোম' বিবাহ বলে।

'বাত্য' ও 'নিষাদ' বলতে কী বোঝায়?

উত্তর। পরবর্তী বৈদিক যুগে বৈদিক সমাজে প্রধান চারটি জাতির পাশাপাশি 'ব্রাত্য' ও 'নিষাদ' নামক দুটি পৃথক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল। ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাব বহির্ভূত আর্যসমাজচ্যুত আর্যরা 'ব্রাত্য' নামে পরিচিত। অন্যদিকে পশুপালনে অভান্ত ও অরণ্যে বসবাসকারী অনার্যরা 'নিষাদ' নামে পরিচিত।


"বহ্মবাদিনী" ও "সদ্যোদ্বাহ" কাদের বলা হতো?

উত্তর। প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে যে শ্রেণির মহিলারা আজীবন বেদ অধ্যায়ন করতেন ও বেদের মন্ত্র রচনা করেছিলেন তাঁরা 'ব্রহ্মবাদিনী' নামে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে পরবর্তী বৈদিক যুগে যে সমস্ত নারী বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বেদচর্চা করতেন তাঁরা 'সদ্যোদ্বাহ' নামে পরিচিত ছিলেন।


 গাভিষ্টি বলতে কী বোঝ?

 উত্তর। ঋগ্‌বৈদিক যুগে যুদ্ধের অপর নাম ছিল 'গাভিষ্টি'। গোরুর অনুসন্ধান গাভিষ্টি নামে পরিচিত অর্থাৎ গো-সম্পদ বা পুনরুদ্ধারের জন্য যে যুদ্ধ হতো তা 'গাভিষ্টি' নামে পরিচিত।

 বৈদিক যুগে আর্যদের জীবনে গো-সম্পদ বা গোরুর গুরুত্ব কী ছিল?

 উত্তর। বৈদিক যুগের প্রথম দিকে আর্যরা ছিল পশুপালনকারী। তাই আর্যদের কাছে উপকারী প্রাণী গোরু ও গো-সম্পদ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পরবর্তীকালে কৃষির প্রসারের ক্ষেত্রেও গোরু তথা গো-সম্পদ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি গোরু ছিল বিনিময়ের মাধ্যম এ সব কারণেই বৈদিক যুগে গো-সম্পদের পরিমাণের উপরে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করতো।


সভা ও সমিতি বলতে কী বোঝ ?

অথবা, বৈদিক যুগে 'সভা' ও 'সমিতি'র কী কাজ ছিল?

 উত্তর। ঋগ্বেদের যুগে উল্লেখিত গণপরিষদগুলির মধ্যে সভা ও সমিতি ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। সভা ছিল গোষ্ঠীর বয়োবৃদ্ধদের সমাবেশ এবং সমিতিতে গোষ্ঠীর সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করতেন। প্রথম দিকে সমিতির ক্ষমতা ছিল ব্যাপক এবং এর সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হতো। কিন্তু কালক্রমে রাজার ক্ষমতা অপ্রতিহত হয়ে উঠনে সভা ও সমিতির ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ঋক্বেদ ও ঋকবেদ পরবর্তী যুগের রাজার ক্ষমতা ও পদমর্যাদার মধ্যে কোনো পার্থক্য ঘটেছিল কী?

উত্তর। ঋগ্বেদের যুগে ও পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজার ক্ষমতার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ঘটেছিল।
 ঋগ্বেদের যুগে রাজা সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না, সভা ও সমিতির পরামর্শের ওপর নির্ভর করে তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। কিন্তু ঋগ্বেদের পরবর্তী যুগে রাজতন্ত্র পরাক্রমশালী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল।

'দশ রাজার যুদ্ধ' বলতে কী বোঝ?

উত্তর। ঋগ্বেদে আছে দশ রাজার যুদ্ধের কাহিনি। ঋগ্‌-বৈদিক যুগে আর্যরা নানা উপজাতি, যথা-ভরত, সৃঞ্জয়, তুর্কস, যদু, অণু, পুরু প্রভৃতিতে বিভক্ত ছিল। কথিত আছে যে, ভারত উপজাতির রাজা সুদাস তাঁর পুরোহিত বিশ্বামিত্রর কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে বশিষ্ঠকে প্রধান পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্বামিত্র দশটি আর্য উপজাতির দশজন রাজাকে জোটবন্ধ করে সুদাসকে আক্রমণ করেন। কয়েকটি অনার্য রাজ্যও এই যুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্তু বশিষ্ঠের আশীর্বাদ-ধন্য রাজা সুদাস শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে জয়লাভ করে রাজাধিরাজ সম্রাট বলে অভিনন্দিত হন।

দশরাজার যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল?

• উত্তর। বৈদিক যুগে সংঘটিত দশরাজার যুদ্ধের গুরুত্বগুলি হলো-প্রথমত, এই যুদ্ধের মাধ্যমে উপজাতি প্রাধান্য বিস্তারের সূচনা হয়। দ্বিতীয়ত, শাসনব্যবস্থায় রাজপুরোহিতের গুরুত্ব স্বীকৃত হয়। তৃতীয়ত,দশরাজার যুদ্ধে ও রাজা সুদাম শেষ পর্যন্ত জয়ী হন ও সম্রাট বলে অভিহিত হন। 

'মনা' ও 'নিষ্ক' কী?

উত্তর। 'মনা' ও 'নিষ্ক' হলো বৈদিক যুগের স্বর্ণমুদ্রা। তবে অনেকের মতে, বৈদিক যুগের অর্থনীতি ছিল মূলত বিনিময় ব্যবস্থা নির্ভর। তাই দৈনন্দিন ব্যবসা-বাণিজ্য বা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে 'মনা' ও 'নিষ্ক' নামক স্বর্ণমুদ্রার ব্যবহার কতটা ব্যাপক ছিল সে সম্পর্কেঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।


আর্যদের দেব-দেবীদের নাম লেখো।
অথবা, বৈদিক যুগের দু'জন দেবতা ও দেবীর নাম লেখো।

উত্তর। আর্যদের দেবতারা হলেন-মহাকাশের দেবতা দ্যৌঃ, বায়ুদেবতা মরুৎ, বৃষ্টি ও বজ্রের দেবতা ইন্দ্র। এছাড়া ছিলেন উমা, সরস্বতী, পৃথিবী ছিলেন বিখ্যাত দেবী।

বৈদিক যুগের দু'জন মহিলা স্তোস্ত্র রচয়িত্রীর নাম লেখো।

উত্তর। বৈদিক যুগের দু'জন মহিলা স্তোস্ত্র রচয়িত্রীর নাম হলো-১। ঘোষা ও ২। বিশ্ববারা।


প্রতিবাদ আন্দোলন

১২.ধর্মীয় প্রতিবাদ আন্দোলন এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা আলোচনা কর।

১৩.বৌদ্ধ ধর্মকে "প্রতিবাদী ধর্ম" বলা যায় কি?

১৪.বৌদ্ধ ও ও জৈন ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা করো। কেন বৌদ্ধধর্মের পতন ঘটেছিল?

১৫. জৈন ধর্মের প্রচারে মহাবীরের ভূমিকা বা বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর.


মগধের উত্থান


১৬.'ষোড়শ মহাজনপদ' সম্পর্কে আলোচনা কর।

১৭.মগধের উত্থান আলোচনা কর এতে বিম্বাসারের ভূমিকা কি?


মৌর্য যুগ 


১৮.মৌর্য শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং পতনের কারণ আলোচনা।

মৌর্য শাসনব্যবস্থা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ সালে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কর্তৃক স্থাপিত এই সাম্রাজ্য ভারতের একটি কেন্দ্রীয়কৃত এবং সুসংগঠিত শাসনব্যবস্থার প্রথম উদাহরণ। 

মৌর্য শাসনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলো:

১. কেন্দ্রীয়কৃত শাসনব্যবস্থা

মৌর্য সাম্রাজ্য একটি কেন্দ্রীয়কৃত শাসনব্যবস্থা ছিল, যার শীর্ষে সম্রাট ছিলেন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক, সামরিক এবং বিচারিক প্রধান ছিলেন।

ঐতিহাসিক আর্থার লুম্বার্ট জানিয়েছেন, "মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা ছিল এক কেন্দ্রীভূত শক্তির অধীনে পরিচালিত, যেখানে সমস্ত ক্ষমতা সম্রাটের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।"


২. বিভাগীয় প্রশাসন

মৌর্য শাসন ব্যবস্থা তিন স্তরে বিভক্ত ছিল:

কেন্দ্রীয় প্রশাসন: সম্রাট এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদ।

প্রাদেশিক প্রশাসন: সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছিল, প্রতিটি প্রদেশের প্রধান ছিলেন রাজা নিযুক্ত রাজ্যপাল।

স্থানীয় প্রশাসন: গ্রাম ও নগরের প্রশাসন, যা গ্রাম প্রধান বা নগরাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে ছিল।

ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার উল্লেখ করেছেন, "মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল প্রথম উদাহরণ যেখানে একটি সুসংগঠিত বিভাগীয় প্রশাসন গড়ে তোলা হয়েছিল।"


৩. আর্থিক ও কর ব্যবস্থাপনা

মৌর্য সাম্রাজ্যের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক ছিল এবং কর ব্যবস্থা সুসংগঠিত ছিল। কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা হতো।

চাণক্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, "সম্রাটের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী ছিল এবং এটি সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।"


৪. গুপ্তচর ও গোয়েন্দা ব্যবস্থা

মৌর্য শাসনব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল গুপ্তচর বিভাগ। সাম্রাজ্যের প্রতিটি কোণে গোয়েন্দা নিযুক্ত ছিল, যারা সম্রাটকে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতেন।

ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন, "মৌর্য শাসনব্যবস্থা গুপ্তচর ব্যবস্থায় এতটাই দক্ষ ছিল যে সম্রাট রাজ্যের প্রতিটি ঘটনার খোঁজ রাখতেন।"


৫. আইন ও বিচারব্যবস্থা

মৌর্য শাসনব্যবস্থায় আইন প্রয়োগে কঠোরতা ছিল। চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, সম্রাট ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। গ্রাম আদালত থেকে শুরু করে রাজকীয় আদালত পর্যন্ত বিচারব্যবস্থা ছিল সুনিয়ন্ত্রিত।

৬. সামরিক শক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

মৌর্য সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি ছিল বিপুল। সেনাবাহিনীতে পদাতিক, অশ্বারোহী, রথ এবং হাতির বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিস তাঁর গ্রন্থ ইন্ডিকা তে উল্লেখ করেছেন, "মৌর্য সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি সমগ্র প্রাচীন বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ছিল।"


৭. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা

সম্রাট অশোক মৌর্য শাসনব্যবস্থার ধর্মীয় সহিষ্ণুতার আদর্শ উদাহরণ। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পর তিনি অহিংসা এবং ধর্মীয় সমন্বয়ের নীতিতে বিশ্বাসী হন।

ঐতিহাসিক হ্যাভেল লিখেছেন, "অশোকের শাসনব্যবস্থা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এক অনন্য উদাহরণ।"


৮. সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা

মৌর্য শাসনব্যবস্থার সময় বৃহৎ সড়ক নির্মাণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল।

মেগাস্থিনিস উল্লেখ করেছেন, "সাম্রাজ্যের সড়কগুলো ছিল বাণিজ্য এবং প্রশাসনের জন্য অপরিহার্য।"


উপসংহার

মৌর্য শাসনব্যবস্থা ছিল একটি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতীক, যা পরবর্তী শাসনব্যবস্থাগুলোর জন্য আদর্শ হিসেবে কাজ করেছে। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল প্রাচীন ভারতের প্রথম বৃহৎ এবং ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য, যা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলে।



মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আলোচনা।

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন (খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫) ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নেতৃত্বে খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ সালে স্থাপিত এই সাম্রাজ্য অশোকের শাসনকালে (খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮–২৩২) সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। তবে অশোকের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ সম্রাট বৃহদ্রথকে তাঁর সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ হত্যা করে শুঙ্গ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলো ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা হলো:

১. সাম্রাজ্যের বিশালত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা

মৌর্য সাম্রাজ্য একটি বিশাল ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছিল।

ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার বলেছেন, "মৌর্য সাম্রাজ্যের বিশালতা তার প্রশাসনিক কাঠামোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, যা অশোকের পরবর্তী শাসকদের জন্য পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।"


২. অশোকের ধর্মনীতি ও সামরিক দুর্বলতা

সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পর অহিংসা এবং যুদ্ধবিরোধী নীতি গ্রহণ করেন, যা সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে তোলে।

ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ উল্লেখ করেছেন, "অশোকের অহিংস নীতি সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি ও প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে তোলে, যার ফলে বাইরের আক্রমণ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।"


৩. অর্থনৈতিক দুর্বলতা

অশোকের শাসনকালে রাজস্বের একটি বড় অংশ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছিল, যা সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল করেছিল।

চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, সাম্রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রশাসনের মূল ভিত্তি; কিন্তু অশোকের পরবর্তী শাসকরা তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন।


৪. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব

অশোকের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে এবং প্রাদেশিক শাসকরা স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।

ঐতিহাসিক হারল্ড ল্যাম্ব লিখেছেন, "মৌর্য সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা অশোকের পর দ্রুত ভেঙে পড়ে, যা সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ।"


৫. উত্তরাধিকার সংকট

অশোকের পর শাসনকর্তাদের মধ্যে যোগ্যতার অভাব এবং উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে তোলে।

ঐতিহাসিক হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী বলেন, "পরবর্তী মৌর্য শাসকরা ছিল দুর্বল ও অদক্ষ, যারা সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারেনি।"


৬. বাহ্যিক আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ

গ্রীক এবং মধ্য এশিয়ার যবন শাসকদের আক্রমণ মৌর্য সাম্রাজ্যের সীমান্ত দুর্বল করে দেয়। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং প্রাদেশিক শাসকদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ সাম্রাজ্যকে আরও দুর্বল করে তোলে।

ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার উল্লেখ করেছেন, "বাহ্যিক আক্রমণ এবং প্রাদেশিক বিদ্রোহ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে প্রভাবক ভূমিকা পালন করেছিল।"


৭. সামাজিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব

অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা সামাজিক দ্বন্দ্বের রূপ নেয়।

ঐতিহাসিক ডি আর ভাণ্ডারকর বলেন, "ধর্মীয় ও সামাজিক অসন্তোষ সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে।"


৮. সেনাবাহিনীর অসন্তোষ ও পুষ্যমিত্রের বিদ্রোহ

শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথের শাসন দুর্বল ছিল। তাঁর সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ বিদ্রোহ করে তাঁকে হত্যা করেন।

ঐতিহাসিক আর কে মুখার্জি বলেছেন, "পুষ্যমিত্রের বিদ্রোহ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের চূড়ান্ত ঘটনা।"


উপসংহার

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন বহুমুখী কারণের ফল। অশোকের পরে শাসকদের দুর্বলতা, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংকট, ধর্মীয় দ্বন্দ্ব এবং বাহ্যিক আক্রমণ সাম্রাজ্যকে ক্রমশ পতনের দিকে নিয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ছিল ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা, যা পরবর্তী রাজবংশগুলোর উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল।



১৯.অশোকের ধর্ম এর মূলনীতি আলোচনা কর।

সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮–২৩২) তাঁর শাসনামলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে একটি অনন্য ধর্মীয় ও নৈতিক নীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা তিনি ধম্ম নামে অভিহিত করেন। অশোকের ধম্ম কেবল ধর্মীয় আদর্শই নয়, এটি সামাজিক এবং নৈতিক জীবনের নিয়ম হিসেবে গড়ে ওঠে। তাঁর শিলালিপি ও শাসনামল থেকে ধম্মের মূলনীতিগুলো নির্ধারণ করা যায়।

অশোকের ধম্মের মূলনীতি

১. অহিংসা (অহিংসায় পরম ধর্ম)
অশোক জীব হত্যা এবং প্রাণী বলি নিষিদ্ধ করেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জীবের প্রতি মমত্ববোধের উপর জোর দেন।

ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার বলেন, "অহিংসার নীতি অশোকের ধম্মের মূল ভিত্তি ছিল, যা সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়নে সাহায্য করেছিল।"


২. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা
অশোক সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সহনশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

ভিনসেন্ট স্মিথ বলেন, "অশোকের ধম্ম বহুধর্মীয় সমাজে সামঞ্জস্য ও শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।"


3. নৈতিক শিক্ষা
অশোক তাঁর প্রজাদের সত্যবাদিতা, দয়া, শালীনতা, এবং প্রাপ্তবয়স্ক ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেন।


4. সামাজিক কল্যাণ
ধম্মের অধীনে অশোক জনগণের জন্য হাসপাতাল, কূপ এবং সড়ক নির্মাণ করেন।

ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার বলেন, "অশোকের ধম্ম জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছিল।"



5. প্রাণী সুরক্ষা
অশোক শিকারের সংখ্যা কমিয়ে দেন এবং পশুপাখির সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করেন।



উপসংহার

অশোকের ধম্ম একটি মানবতাবাদী ও নৈতিক জীবনধারা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। এটি ধর্মীয় ভেদাভেদকে অতিক্রম করে সামাজিক সাম্য, শান্তি এবং কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গিত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি তাঁর শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল।




সাতবাহন

২০.সাতবাহন শাসনব্যবস্থা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা করো।

২১.শক-সাতবাহন সংঘর্ষের বর্ণনা দাও। 
অথবা, মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তীকালে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহনদের সঙ্গে শকদের সংঘর্ষের বিষয়ণ দাও।


কুষাণ যুগ


২২.ভারতের ইতিহাসে কুষাণ যুগের গুরুত্ব আলোচনা করো। অথবা, কুষাণযুগের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিরূপণ করো।

২৩. মথুরা শিল্পরীতি সম্পর্কে আলোচনা কর।






গুপ্ত যুগ


৯. সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবাদ নীতি আলোচনা কর.

১০. গুপ্তযুগ কি প্রকৃতই ভারতের সুবর্ণ যুগ? এই শাসন ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।

১১. গুপ্ত যুগে গিল্ড ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।


প্রত্যেক এর মান - ২

গুপ্তবংশের প্রথম ও শেষ রাজার নাম কী? 

উত্তর। গুপ্তবংশের প্রথম রাজার নাম হলো শ্রীগুপ্ত।
• গুপ্তবংশের শেষ রাজার নাম হলো জীবিত গুপ্ত।


গুপ্তসম্বৎ' বলতে কী বোঝায়?

উত্তর। গুপ্তসম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তাঁর সিংহাসনারোহণকে (আনুমানিক ৩১৯-৩২০ অব্দ) স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ করতে সময় গণনার যে নতুন বছর বা অব্দ চালু করেন তা 'গুপ্তসম্বৎ' নামে পরিচিত।

 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' কী?
অথবা, এলাহাবাদ প্রশস্তির গুরুত্ব কী?

উত্তর। 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' গুপ্তযুগের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গুপ্তরাজা সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি 'হরিষেণ', সংস্কৃত ভাষায় 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' রচনা করেন। এটি থেকে সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যবিজয়, কৃতিত্ব ও তাঁর বহুমুখী প্রতিভার কথা জানা যায়।


"গ্রহণ-পরিমোক্ষ" নীতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর। সমুদ্রগুপ্ত এই নীতি গ্রহণ করেন। সমুদ্রগুপ্ত উত্তর-ভারত ও দক্ষিণ-ভারত জুড়ে এক বিস্তীর্ণ এলাকায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণ-ভারতে বিজিত রাজ্যগুলিকে সরাসরি গ্রাস না করে গুপ্ত সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। এই নীতি "গ্রহণ-মোক্ষ অনুগ্রহ" নীতি নামে কথিত।

 সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে বিজয়নীতির পার্থক্য ছিল কী?

উত্তর। সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিকে দখল করে তাঁর সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। এইখানে তিনি "সর্বরাজোচ্ছেত্তা"র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ-ভারতের অভিযান সামরিক দিক দিয়ে সাফল্য লাভ করলেও তিনি দক্ষিণ-ভারতের রাজ্যগুলিকে তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন নি। স্থানীয় রাজাদের আনুগত্য লাভ করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।


সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যসীমা কী ছিল?

উত্তর। পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, দক্ষিণে নর্মদা এবং উত্তরে হিমালয় ও কাশ্মীর পর্যন্ত সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যসীমা বিস্তৃত ছিল। তবে উত্তরভারতে তাঁর প্রত্যক্ষ শাসন থাকলেও দক্ষিণভারতের পরাজিত রাজ্যগুলিতে তার শাসন ছিল পরোক্ষ।

সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক পরাজিত যে কোনো দু'জন দক্ষিণ-ভারতীয় রাজা ও তাদের রাজ্যের নাম লেখো।


উত্তর। সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক পরাজিত দুজন দক্ষিণ ভারতীয় রাজা হলেন-কোশলের রাজা মহেন্দ্র ও কাঞ্চির রাজা বিষ্ঞুগোপ।

 দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে কোন বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন? ভারত সম্পর্কে তিনি যে গ্রন্থটি লিখেছিলেন তার নাম লেখো।


উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চিনা পর্যটক 'ফা-হিয়েন' ভারতে আসেন।

• তাঁর রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তটি হলো 'ফো-কুয়ো- কি

কোন্ গুপ্তসম্রাট শকদের পরাজিত করেন? জয়লাভের পর তিনি কী উপাধি গ্রহণ করেন?

উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শকদের পরাজিত করেন-এর ফলে পশ্চিম-ভারতে শক শাসনের
অবসান হয়। এই অসামান্য বিজয়ের পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত 'শকারি' উপাধি গ্রহণ করেন।

'শকারি' কাকে বলা হয় এবং কেন?
অথবা, কোন গুপ্তসম্রাট 'শকারি' নামে পরিচিত ছিলেন এবং কেন?


উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত 'শকারি' নামে পরিচিত।

• দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পশ্চিম ভারতের দুর্ধর্ষ শকদের পরাজিত করে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে সম্প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি একাজে সফল হন ও

শকদের বিতাড়িত করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি 'শকারি' উপাধি গ্রহণ করেন।


দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে কোন বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন? ভারত সম্পর্কে তিনি যে গ্রন্থটি লিখেছিলেন তার নাম লেখো।

(ব.বি. ২০১২)

উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চিনা পর্যটক 'ফা-হিয়েন' ভারতে আসেন।

• তাঁর রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্তটি হলো 'ফো-কুয়ো কি'।

কোন গুপ্তসম্রাট শকদের পরাজিত করেন? জয়লাভের পর তিনি কী উপাধি গ্রহণ করেন?

উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শকদের পরাজিত করেন-এর ফলে পশ্চিম-ভারতে শক শাসনের অবসান হয়। এই অসামান্য বিজয়ের পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত 'শকারি' উপাধি গ্রহণ করেন।

'শকারি' কাকে বলা হয় এবং কেন?
অথবা, কোন্ গুপ্তসম্রাট 'শকারি' নামে পরিচিত ছিলেন এবং কেন?


উত্তর। গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত 'শকারি' নামে পরিচিত।

• দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পশ্চিম ভারতের দুর্ধর্ষ শকদের পরাজিত করে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে সম্প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি একাজে সফল হন ও শকদের বিতাড়িত করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি 'শকারি' উপাধি গ্রহণ করেন।


কোন গুপ্তসম্রাট প্রথম হুণ আক্রমণ প্রতিহত করেন? কোন্ স্তম্ভলেখ থেকে একথা জানা যায়?


উত্তর। গুপ্তসম্রাট স্কন্দগুপ্ত হুণ আক্রমণ প্রতিহত করেন।
• স্কন্দগুপ্তের 'ভিতরি' বা 'ভিটারি' স্তম্ভলেখ থেকে একথা জানা যায়।

'ভিতারি' বা 'ভিটারি' শিলালেখর গুরুত্ব কী?

উত্তর। গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের শাসনকালের এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদান হলো 'ভিটারি স্তম্ভলেখ'। এই লেখ থেকে জানা যায় যে, স্কন্দগুপ্ত দুর্ধর্ষ হুণ জাতির ভারত আক্রমণকে প্রতিহত করে ভারতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। এই লেখ থেকে স্কন্দগুপ্তের সাম্রাজ্যের আয়তনও জানা যায়।

 যশোধর্মণ কে ছিলেন?

উত্তর। গুপ্তসাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালবে যশোধর্মণ স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। হুণরাজ মিহিরকুলকে পরাজিত করে সামরিক বীরত্বের পরিচয় দেন।


গুপ্তযুগে "দেশ" ও "ভুক্তি"র শাসনকর্তাগণ কী নামে পরিচিত?


উত্তর। গুপ্তযুগে "দেশ"-এর শাসনকর্তা 'গোপ্তা" এবং ভুক্তির শাসনকর্তা "উপরিক মহারাজা" নামে পরিচিত।

 গুপ্তযুগের প্রধান কৃষিজ ফসল কী ছিল?

উত্তর। গুপ্তযুগের প্রধান কৃষিজ ফসল ছিল ধান, গম, তিল, যব ও নানাধরনের তৈলবীজ।

 গুপ্তযুগের প্রধান প্রধান শিল্পগুলি কী ছিল?

উত্তর। গুপ্তযুগের প্রধান প্রধান শিল্পগুলি ছিল-বস্ত্রশিল্প, চর্মশিল্প, ধাতুশিল্প ও কারুশিল্প।

 প্রাচীন ভারতের গিল্ড পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।


উত্তর। প্রাচীন ভারতে গিল্ড পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য হলো- (১) শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কারিগর, শ্রমিক ও বণিকরা নিজ নিজ শ্রেণির স্বার্থরক্ষার্থে গিল্ড গঠন করতো। অর্থাৎ গিল্ডের সদস্যদের স্বার্থরক্ষা ছিল গিল্ডের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। (২) গিল্ড গঠনের তিনটি উপাদান ছিল যথা বংশানুক্রম, স্থানীয়করণ ও
জেথথিক পদ।

 "অগ্রহার" কী?

উত্তর। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্র কর্তৃক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে নিষ্কর ভূমিদান করার প্রথা অগ্রহার নামে পরিচিত। এর ফলে জমির ওপর রাষ্ট্রীয় অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়। অন্যদিকে রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে দেখা দেয় আঞ্চলিকতা।

শেঠঠি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর। শেঠঠি বলতে প্রাচীন ভারতের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বা-ব্যবসায়ীদের নেতাকে বলা হতো। আবার বিভিন্ন লেখ থেকে বলা যায় যে, শেঠি ছিলেন গৃহপতি শ্রেণির সর্বাপেক্ষা অভিজাত প্রতিনিধি।

 "অনুলোম" বিবাহ কী?

উত্তর। প্রাচীন ভারতে বিবাহের ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের পাত্রের সঙ্গে নিম্নবর্ণের পাত্রীর বিবাহ সম্পন্ন হলে তা অনুলোম বিবাহ নামে পরিচিত।

"প্রতিলোম বিবাহ" কী?

উত্তর। প্রাচীন ভারতে বিবাহের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের পাত্রের সঙ্গে উচ্চবর্ণের পাত্রীর বিবাহ সম্পন্ন হলে তা প্রতিলোম বিবাহ নামে পরিচিত হতো।

বরাহমিহির কে ছিলেন? তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর। বরাহমিহির ছিলেন যুক্তযুগের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁর লেখা গ্রন্থদুটির নাম হলো-

"বৃহৎসংহিতা" ও "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা"।

কয়া স্বন্তরী কে ছিলেন? তিনি বিখ্যাত কেন?

উত্তর। ঘুপ্তযুগের একজন বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন ধন্বন্তরী। তিনি ভেষজ বিজ্ঞানের "নির্ঘণ্ট" রচনাকারী ছিলেন।

 আর্যভট্ট কে ছিলেন? তিনি বিখ্যাত কেন?

উত্তর। আর্যভট্ট ছিলেন গুপ্তযুগের একজন বিখ্যাত জ্যোতিবিজ্ঞানী। তিনি "সুর্যসিদ্ধান্ত" নামক গ্রন্থের রচয়িতা। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয়।

 চরক কে ছিলেন? চরক সংহিতায় কী লেখা রয়েছে?

উত্তর। চরকে ছিলেন একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চরকসংহিতায় শারীরবিদ্যা, ধাত্রীবিদ্যা ও প্রজননবিদ্যার ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল।

 সুশ্রুত কে ছিলেন? সুশ্রুত সংহিতায় কী লেখা রয়েছে?

উত্তর। অনুমান করা হয় সুশ্রুত ছিলেন কুষাণ যুগের একজন বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী। সুষুত সংহিতায় ৮টি প্রধান ব্যাধি ও সেগুলির চিকিৎসার কথা বর্ণিত রয়েছে।

ব্রহ্মগুপ্ত কে ছিলেন? তিনি বিখ্যাত কেন?

উত্তর। গুপ্তপরবর্তীযুগের বিখ্যাত গণিতবিদ ছিলেন ব্রহ্মগুপ্ত। "ব্রহ্মসিদ্ধান্ত" ও "খন্ডপাদ্য" নামক দুটি গ্রন্থে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিশাস্ত্রের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন।

কালিদাস রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।

উত্তর। কালিদাস রচিত দুটি নাটক হলো-(১) 'মালবিকাগ্নিমিত্রম'ও (২) 'অভিজ্ঞান শকুন্তলা'।

গুপ্তযুগে দুই জন বিখ্যাত গণিতজ্ঞের নাম লেখো।  

গুপ্তযুগে দুইজন বিখ্যাত গণিতজ্ঞের নাম হলো
-(১) আর্যভট্ট এবং (২) ব্রহ্মগুপ্ত।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.